সবাইকে ক্ষমা করতে নেই
দীপক ঘোষ
২০০২ সালে যোধপুর পার্কে দিলওয়ারা মন্দির বানিয়ে যথেষ্ট সুনাম পেলেও, আমার সাত বছরের ছেলে ও ওর থেকে ছয় মাসের ছোট ওর মামাতো বোনের করুন মুখটা দেখেই ঠিক করেছিলাম, যে না আর ঝগড়া বা জেদাজেদি নয়। তাই ওই ডেকোরেটর আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়েই কাজ করব মনস্থ করলাম, নাহলে ওর বিয়ে বাড়ির ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারত। কিন্তু কাজটা হবে দুজনের মধ্যে একটা শর্তের বিনিময়–কি হবে, এবং তা কেমন ভাবে হবে তা ঠিক করবো আমি, আমার টিমের কাজের জন্য পূর্বনির্দিষ্ট যা খরচ হবে তা আমাকে দেবে সেই ডেকোরেটর। পুজো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার কোনও চুক্তি থাকবে না । আমি ডেকোরেটরের হয়ে কাজ করব। আর প্রধান কথা — কারও ইন্টারফিয়ারেন্স সহ্য করব না। এমন হলে তৎক্ষণাৎ নিজের টিমকে সেখান থেকে তুলে নেব। পুজো কমিটির সঙ্গে ডেকোরেটরই একমাত্র কথা বলবে এবং সব দায় তারই থাকবে। গত দুই বছরের অভিজ্ঞতায় proper estimate টা করায়ত্ত করে ফেলেছিলাম তাই তৃতীয় বছরের প্রজেক্ট কস্ট ভুল ছিল না। যাই হোক ২০০৩ সালের ভাবনা ছিল ‘ভারতীয় পুতুল নাচ’ । জাহাজে কর্মরত পুজো কমিটির আর এক কর্ণধার আশিস মুখার্জি কে এই পাপেটের কথা জানানোতে খুব উৎসাহিত হয়েছিল সাবজেক্ট এর জন্য। কিন্তু তিনি পুজোতে আসতে পারেননি কাজের জন্য বিদেশে ছিলেন। যাই হোক এর জন্য যথেষ্ট পড়াশোনা দরকার তাই পাপেটিয়ার এর খোঁজে রঘুনাথ গোস্বামী অ্যাসোসিয়েটসের দিলীপ ভৌমিক এর সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওনার কাছ থেকে অনেক বই ও ইনফরমেশন পাই – যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমার এই প্রজেক্টটা ভালোভাবে উঠে যাবে। বই পড়ে ঠিক করি রাজস্থান, অন্ধ্রপ্রদেশ,উড়িষ্যা, কর্ণাটক ও বাংলার পাপেট নিয়ে কাজ করব। বিভিন্ন ধারার পাপেট প্রদর্শনের সঙ্গে সঙ্গে লাইভ পারফরম্যান্স রাখব ঠিক করেছিলাম যার জন্য আমতলা থেকে অনেক দূরে এক ছোট্ট গ্রামে এক পাপেট পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছিল। যথাসময়ে পাঁচ প্রদেশের পাপেট গুলো বানানো শুরু করলাম আমার ওয়ার্কশপে। আনন্দ বাজার পত্রিকায় আবারও বড় করে ছবি ও দেবদূত দার লেখা বেরোলো।সঙ্গে অন্যান্য electronic ও print mediaর coverage ।আমার কাজের নিয়ম ধারা হল প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত কাজের ডিটেলিং আমি প্রথমেই জানিয়েদি যাতে বুঝতে কারো অসুবিধা না হয়। সেই হিসাবেই ডেকরেটর পুজো কমিটির সঙ্গে কথা বলেছিল।
আরে তুমি উত্তম হলে কি হবে, অধমের তো অভাব নেই! যথারীতি সেই ডেকোরেটর ক্লাবেরই একজনকে কাজে লাগিয়ে আমাকে বিরক্ত করা শুরু করল এবং আমার কাজে অযাচিতভাবে ও অজ্ঞানতা বসত interfere করা শুরু করলো। আমিও তার কথার মর্যাদা রেখে তার কথামতো কিছু চেঞ্জ করে দিলাম কিন্তু সেক্রেটারীকে ডেকে জানিয়ে দিলাম আমি কিন্তু দ্বিতীয়বার এটা খুলবো না। তার পরেই চুক্তি অনুযায়ী আমিও আমার সহযোগীদের তৎক্ষণাৎ ওখান থেকে তুলে নিলাম। যোধপুর পার্ক হ’লো বনেদি পাড়া। তাই ওখানকার সেক্রেটারি সুমন্ত রায় (সোনা) আমাকে কিছুই না বলে শুধুই ডেকোরেটরের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, কারণ ক্লাবের চুক্তি হয়েছিল সেই ডেকরেটরের সঙ্গে। তারাও বুঝে গিয়েছিল- এর পেছনে কলকাঠি কে নাড়াচ্ছে। লক্ষ্মী ও সরস্বতীর ঝগড়ায় যোধপুর পার্কের পুজো ক্ষতিগ্রস্ত হলো। আমিও ঠিক করে নিলাম আমি আর কোনো দিনও কোনো ডেকরেটর কে সঙ্গে নিয়ে করবো না। কারণ অধিকাংশ ডেকরেটরের কাছে capital profit আর revenue profit ই সব, যেখানে আমাদের মতো মানুষদের কাছে work satisfaction টা প্রধান। এর পর বেশ কিছু বছর আমি যোধপুর পার্কে কাজ করিনি। পরিস্থিতির চাপে আমাকে নিজের উত্থানের উৎস থেকে সরে থাকতে হয়েছিল।