শিল্পীর পুজোনামচা/১১

সুরুচিতে হিমাচল

দীপক ঘোষ

আমার বই কেনার খুব শখ। যখনই হাতে টাকা থাকে বা ভাল কোন বই চোখে পড়ে সেটাকে কিনে ফেলি। সঙ্গে সঙ্গেই হয়তো সব পড়া হয়না। কিন্তু আমার লাইব্রেরীতে থেকে যায়। নিউ মার্কেটের কাছে Bookline নামে একটা বই এর দোকানের মালিক  Mr. Brijesh Tewariএর সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক। নতুন ভালো বই (যা আমার কাজে লাগতে পারে) আসলেই আমাকে খবর দেন।  এরকমই একটা বই  ‘Unknown Masterpieces Of Indian Folk & Tribal Art’ এর খবর দেন, আমিও কিনে নিই। প্রথম দিনই দেখলাম হিমাচল প্রদেশে বিভিন্ন শতকে প্রাপ্ত বিভিন্ন দুর্গার statueর ছবি। তৎক্ষণাত মাথায় একটা idea খেলে গেল। ভাবলাম যদি অরূপ আবার ডাকে তো সেখানে ‘হিমাচল প্রদেশ’ নিয়ে কাজ করবো। অপেক্ষায় রইলাম তবুও নিজে যেচে কিছু বলিনি। যথারীতি মার্চ মাসে অরূপের ফোন, ‘দাদা এবার কিন্তু তুমিই করবে।’ আমি তখন ওর ক্লাবে গিয়ে হিমাচল প্রদেশের কথা বলি ও বিভিন্ন শতকের দুর্গা গুলো কি ভাবে উপস্থাপন করবো তার ইঙ্গিত দিই। যেহেতু সেই সময় ও MLA হয়ে গেছে তাই পুজোর volume টা বাড়াতে চেয়েছিল। তখন আমি বললাম, পুরো মাঠ টা জুড়ে পাহাড়ের step cultivation , পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিপাশা নদী এবং মূল মন্দিরটা হবে চাম্বার লক্ষ্মী-নারায়ণ মন্দিরের মতো। তবে এবার মন্দির হবে p.o.p র। ও এক কথায় রাজি হয়ে গেল। তবে ওর একটা অনুরোধ ছিল, ‘দীপক দা তুমি শুধুই আমাদের টা করবে। কারণ গতবারের আর্টিস্ট কে মাঠে পাওয়া যেত না ও ৪টা পুজোর দায়িত্বে ছিল।’ যাইহোক ও সঙ্গে সঙ্গেই ক্লাবের দুটো ছেলের সঙ্গে আমাকে হিমাচল প্রদেশের নির্বাচিত জায়গায় (মানালি, খাজিয়ার ও চাম্বা) ভ্রমণে পাঠিয়ে দিল। ফিরে এসে সমস্ত কিছু final করে june মাস থেকে কাজ শুরু কোরলাম। মাটি থেকে ১৪ফুট উঁচুতে ৩০ ফুট উঁচু মন্দিরে হিমাচলি ঘরানার দুর্গা মূর্তি (প্রদীপের বানানো)। ডান দিক থেকে বয়ে চলেছে ১১০ ফুট লম্বা আর ৬-৭ ফুট চওড়া খরশ্রোতা বিপাশা নদী। আর  ঘোড়ার নালের আকৃতির পাহাড়ের মধ্যবর্তী অঞ্চলে পাহাড়িদের জুমচাষ। চাষের কাজটা করেছিল United Nursary। জুম চাষের দুদিকে পাহাড়ের ১০টা বিভিন্ন metallic দুর্গা (যা বানিয়ে ছিল বাবলু বণিক)। প্রকৃতিকে নকল করা দুঃসাধ্য হলেও আমরা অনেকটাই কাছাকাছি আসতে পেরেছিলাম।

Share