ভাস্করের চোখে/৮

পুজো কিন্তু শিল্পীদের জীবিকা

বিমল কুন্ডু

আমি এশিয়ান পেইন্টসর সঙ্গে এক বার বিচারক হয়ে গিয়েছিলাম। উফ! কি খাটায় গো বাবা। এখন শুনেছি পয়সাকড়ি দেয়। আগে তো দিতো না। আগে বিকেল পাঁচটায় নিতো এবং পরদিন সকাল দশটায় ছেড়েছে। এত খাটনি কিন্তু আনন্দবাজারে হয় না। আগে জিটিভি করেছি, টাইমস অফ ইন্ডিয়া করেছি। বেশ কয়েকবার কলকাতা কর্পোরেশন করেছি। এ বছর এখনও পর্যন্ত আনন্দবাজার পত্রিকা আর উৎকর্ষে আরোহন ফিক্সড।
এইযে খুঁটিপুজো, আগস্টের পর থেকে হেন কোনও খুঁটিপুজো নেই, যারা আমাকে ডাকে না। বলতে গেলে প্রতি রবিবারে খুঁটি পুজোতে থাকতাম।
রামানন্দদা প্রফেশনালি ভালো কাজ করে। শোভাবাজার আহিরিটলাতে বেশ কয়েকবার কাজ করেছে। থিমটা ওদিকে বেহালা, এদিকে উল্টোডাঙ্গা তে ফ্লারিশ করেছিল। উল্টোডাঙ্গার মধ্যে তেলেঙ্গানা বাগান করবাগান এইগুলো তখন ফ্ল্যারিশ করেছিল। তারপর এদিকে হাতিবাগান উঠে এলো। তেলেঙ্গানা বাগানে প্রথমে থিম করতনা। সুশান্ত একবার কাজ করেছিল পুরো পাড়া নিয়ে। অসাধারণ হয়েছিল। সুশান্ত (পাল) শিল্পীদের মধ্যে খুব ইন্টেলিজেন্ট। সুশান্তর মধ্যে একটা মাস্টার ইনস্টলেশন কোয়ালিটি আছে। এই যে সনাতন, ওরা তো একটু ওরিয়েন্টাল স্টাইলে করে। কিন্তু সুশান্তর কাজের মধ্যে বেশ বক্তব্য থাকতো। বেহালার ওই নিবেদিতা সংঘের দিকে প্লাস্টিকের জিনিসপত্র দিয়ে তৈরি হয়েছিল প্যান্ডেল। কোনও ঠাকুরই নেই। আমি বললাম, ‘তুমিতো পলিউশন বাড়িয়েছো। পলিউশন দূরীকরণের যেটা এগেইনস্টে, সেটাইতো তুমি করেছো।’ পার্থ (দাশগুপ্ত) খুব ভালো ভালো কাজ করেছে। ওর ডিজাইন নিয়ে , ওর আলপনা নিয়ে কোনও কথা হবে না। পার্থ আমাকে খুব সম্মান করে। পার্থ, সুশান্ত এরা তো খুব আমার ক্লোজ। ওরা একটা হোয়াইট স্পেসকে কিভাবে ইউজ করে ডিজাইন এন্ড ডায়াগ্রাম করত সেটা দেখার মত। এবার করছে খুব সিম্পিল ছোটখাটো। আর এস বি পার্কে তো দারুন, আমাকে সম্মান করে।
জাজমেন্টে করার সময় আমার সঙ্গে যারা থাকে তাদেরকে বলি , ‘তোমাদের ওপেনিয়ন কি?’ এবং ওরা কি কমেন্ট করে এবং সেটুকু বেস করে আমরা আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করি। আমি দীর্ঘদিন যাবত বিচারকের কাজ করেছি। আমি একজন ক্রিয়েটিভ আর্টিস্ট। একমাত্র স্কাল্পচর হিসেবে ক্রিটিভ আর্টিস্ট আমি। গনেশ পাল পেইন্টার ছিলেন। আমি স্পষ্ট, পরিষ্কার কথা বলতে পারি, যেখানে যেটুকু দরকার সেটুকু। এবং প্রত্যেকে ওই জায়গাটা বোঝে। একটা পূজাকে মাউন্ট করলে সবকিছু জেনে বিচার করি। আমি যেহেতু একটা শিল্পী, তাই শিল্পী কতখানি পরিশ্রম করে, কতটা কষ্ট করে তা আমি জানি। একটা শিল্পীর পেছনদিকটা খুব দুঃখজনক থাকে। যখন পুরস্কার পায় খুব লাফালাফি করে। কিন্তু তিন মাস যখন কাজ করে কতটা কষ্ট সহ্য করতে হয়, তা সবাই জানেনা। যাদের নিয়ে ওরা কাজ করে তাদের সঙ্গে উদ্যোক্ত
তারা খুব খারাপ ব্যবহার করে, সনাতন আমার কাছে মাঝে মাঝে দুঃখ প্রকাশ করে ঠাকুর করে ছেড়েই দেবো। বেসিক্যালি গোটা পুজো কমিটিতে সব রকমের লোক থাকে। একটা শিল্পীকে অনেক কিছু ট্যাকেল করতে হয় তারপর পূজাটা হয়। পুজোটা বেসিক্যালি গভমেন্ট আর্ট কলেজের ছেলেদের। ম্যাক্সিমাম আর্টিস্টই আর্ট কলেজের ছেলে। আমি মনে করি শিল্পীদের জন্যে আলাদা একটা জীবিকা তৈরি হয়েছে । সরাসরি শিল্প। তারা শিল্পকে নিয়ে বেঁচে আছে। শুধু তাই নয়, অনেক শিল্পী ভারতবর্ষের নানা স্টেটে গিয়ে কাজ করেছে। থিম এখন বম্বে দিল্লির সব জায়গাতেই হচ্ছে। এবং জেলাতে হচ্ছে , সেখানে গিয়ে তাদের ভাবনা চিন্তা নেওয়া হচ্ছে। কলকাতা পাস করা আর্টিস্ট তারা জেলা থেকে কাজ করছে। কত হাজার লোকের সঙ্গে যুক্ত আছে। কত গ্রামীণ শিল্পী, তারা কখনো ভাবতে পারিনি, যান এখান থেকে পয়সা পাবো উপার্জন করবো। মাটির কাজ হোক, সুতোর কাজ হোক পাটেরর কাজ হোক-তাদের প্রত্যেককে কাজ পাইয়ে দিয়েছে পুজো। (শেষ)

Share