আমি বিবর্তনের সাক্ষী
বিমল কুন্ডু
রমেশ পালের সমসাময়িককালে বনেদিপুজোয় খুব নাম করেছিলেন রাখাল পাল । রাখাল পাল কিন্তু খুব অভিজাত্যে পূর্ণ ঠাকুর করতেন। খুব পাওয়ারফুল ঠাকুর করতেন। প্রতিমার মধ্যে একটা ভারিক্কি চেহারা লুকিয়ে থাকত। এখন কুমোরটুলির বেসিক জিনিস হল, দুই বাংলার দুই আলাদা ঘরানা। এ পার বাংলা অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীদের ঠাকুর হত স্লিম আর ওপার বাংলার অর্থাৎ পূর্ববঙ্গ, অধুনা বাংলাদেশ থেকে আসা শিল্পীদের অর্থাৎ কিনা বাঙ্গাল শিল্পীদের প্রতিমা হত ভারী চেহারার।
রাখাল পাল ছিলেন শেষের ঘরানার। অত্যন্ত নিট ঠাকুর তৈরি করতেন। কুমোরটুলির একচেটিয়া আধিপত্য একসময় ভেঙে গেল। থিমের ঠাকুর আসার পরে কুমোরটুলির বাইরে থেকে ঠাকুর গড়ানো শুরু হল। কুমরোটুলিতেই ঠাকুর তৈরি করাতে হবে সেই বাধ্যবাধকতাটা আর থাকলনা। আস্তে আস্তে থিমটা যখন অনেক জনপ্রিয় হতে শুরু করলো, তখন অনেক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ল। বিরাট পুজো এটা একটা। কলকাতার ভালো ভালো আর্টিস্টরা সেগুলির সঙ্গ যুক্ত হয়ে গেল। তারা এটাকে ডেভলপ করছে, এবং প্রত্যেকটি ক্লাব কমিটি অনেকভাবে ভাবছে। আরো নতুন নতুন ভাবনা চিন্তা মাথায় ঘুরছে।
কলকাতার পুজোয় ইউরোপিয়ান ধারা চলে এল। ইনস্টলেশন আর্ট। ইনস্টলেশন কথার অর্থ হলো একটা জিনিস গড়া হলো। সেটা বিক্রি করা যাবে না। আবার তার স্থায়িত্বও সাময়িক। সেই ইনস্টলেশন টা কোন একটা প্রজেক্ট হিসাবে কেউ তৈরি করেছে। সেটাকে গড়া হল দু’মাস থাকল। দেখলো। তারপরে ভেঙে ফেলা হল। আমাদের এখানে, যেখানে দুর্গাপুজো কমপ্লিটলি ইনস্টলেশন সেটাকে কিন্তু কেউ ইনস্টলেশন বলে করেনি। পরবর্তীকালে সুশান্ত (পার) এল,ভব (ভবতোষ সুতার) এল, পার্থ দাসগুপ্ত এল। তারপরে আরও অনেকে এলো তারা অত্যন্ত ভালো কাজ করতে লাগল। আমরাতো ফুলটাইম আর্টিস্ট। কমার্শিয়ালের সঙ্গে তখন
প্যারালালি ঠাকুর গড়ার পেশা তৈরি হল। সেই পেশায় প্রচুর শিল্পী যুক্ত হতে লাগল । এবং যারা প্রফেশনালি নাম করেছে, সুশান্ত থেকে ভব, আরো অনেকই , এর সঙ্গে আরও তরুণ শিল্পী কাজ করতে লাগল, এখনতো থার্ড স্টেজ এর শিল্পী চলছে। পরবর্তীকালে থিম আর্টিস্ট তৈরি হল, আস্তে এই ধারা পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। পুজোর জনপ্রিয়তা আকাশ ছোঁয়া হয়ে গেল। কর্পোরেট হাউসগুলো ঝাপিয়ে পড়ল আর
পুরস্কার শুরু হয়ে গেল,প্রচুর কোম্পানির ঢল নেমে এল। পুরস্কার দেওয়া শুরু হল।