শিল্পীর পুজোনামচা/৩

সার্বজনীন হওয়ার আগে আমি

দীপক ঘোষ

খেয়াল করে দেখবেন প্রত্যেক পাড়াতেই বিভিন্ন জেনারেশনে কিছু সুবিধাবাদী, অলস ও অনৈতিক মানুষজন থাকে। আমার পাড়ার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। প্রতি পুজোর শেষেই দেনার অঙ্ক বৃদ্ধি পেত। তার কারণ-  পুজোর টাকা নয়ছয় করে নিজেরা ফুর্তি করত। ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত আমি শুধুমাত্র মণ্ডপসজ্জার দায়িত্বে থাকতাম (ঢাক বাজানো ছাড়া)। অন্য কিছুতে আমার বিশেষ আগ্রহ থাকত না। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত আমি আমার পারার পুজো এক দায়িত্বশীল পুজো কর্মকর্তা- ববিদার ( পুজোর ট্রেজারার) সঙ্গে আমি যৌথভাবে আয় ও ব্যয়ের দিকটা দেখতাম। ফলে আস্তে আস্তে প্রত্যেকের ই আমার ওপর একটা বিশ্বাস জন্মে গিয়েছিল। যোগ্য উত্তরসূরী পাওয়ার পর ববিদা পুজোর অর্থনৈতিক দিকটা পুরোটাই আমার ওপর চাপিয়ে দিল। তাতে বেশকিছু আমারই সমবয়সী ছেলে রেগে গেল যেহেতু আমি তাদের অনৈতিক আবদার গুলো কে পাত্তা দিতাম না। আমার একটাই কথা –‘যে সকলের পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার দায়িত্বে থাকবে তাকেই ট্রেজারার করা হবে নচেৎ নয়। আমি দায় নেব আর তুমি অকারণ খরচা করে পুজোর টাকা শেষ করবে আর দেনা বাড়বে তা তো হতে দেওয়া যায় না।’ এ কথাটাও বলে রাখি – আমাদের আজীবনের Secretary শুধু মাত্র নাম ভূমিকায় ব্যানারে ঝুলতো! তবে মনের দিক থেকে খুব ভালো মানুষ, তাই যত দায়িত্ব treasurerএর। এই ভাবেই আস্তে আস্তে কিছু জনের আমার বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়তে লাগল। আমি কোন দিকেই কান দিতাম না, নিজের কাজ করে যেতাম এবং ফলে পাড়ার পুজো টা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে লাগলো। বলে রাখি আমার ক্লাবের নাম ‘দক্ষিণ লেক পল্লী সংহতি’ আনোয়ার শাহ রোডের ওপরে লর্ডস বেকারির মোড়ের কাছে। ওই অঞ্চলে যোধপুর পার্কের পুজোর পরেই ছিল আমার ক্লাবের নাম। ডানলপের গাইড ম্যাপ আমাদের নাম ছিল ভালো পুজো করার জন্য। অবশ্য ছোট পুজো। সুবিধাবাদীদের না পাওয়ার যন্ত্রণাটা যখন বিকট হয়ে দাঁড়ালো তখন তারা আমার বিরুদ্ধে অকারণ কুৎসা শুরু করলো। পাড়ার পুজোর স্বার্থে সমস্ত কুৎসা কে অগ্রাহ্য করে ১৯৯ পর্যন্ত পুজো চালিয়ে ২০০০ সাল আমাদের জুনিয়ার ব্যাচের হাতে পুজোর দায়িত্ব অর্পণ করে পাড়ার পুজো থেকে অব্যাহতি নিলাম। এতদিন যার হাতে পুজো ধীরে ধীরে একটা মাত্রা পেতে শুরু করেছে সেকি পুজো ছাড়া থাকতে পারে তাই ঠিক করলাম ২০০১ সালে পুজোতে বেড়াতে যাব আমার unitএ Computer Graphics এর ছেলেদের পুজোর bonus ও salary দেবার পর হাতে অবশিষ্ট টাকা সম্বল করে। কারণ পুজোর চার দিন যে নিজেকে বড় অসহায় মনে হবে তাই দূরে থাকাই শ্রেয় মনে করলাম।
আমি ছাড়লে কি হবে মা দুর্গা কি আমায় ছাড়বে? ২০০১ সালে যোধপুর পার্কের পুজোটা করার অনুরোধ আসলো আমার এক পরিচিতের মাধ্যমে, যে নিজে একজন সফল ডেকোরেটর।
আজ এই পর্যন্ত। পরে বলব ২০০১ সালে আমার পাড়ার বাইরে প্রথম পুজোর কাজ করার অভিজ্ঞতা।

Share