শিল্পীর চোখে/১

অশোকদা মানেই অন্য অনুভূতি

সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়

আমার পাড়া ছিল তো রাজবল্লবপাড়া! এবং পাশেই কুমোরটুলি। তাই ঠাকুর দেখা, ঠাকুর-এর শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত মূর্তি বানানো, তাকে সাজানো ,তার রঙের যাবতীয় আয়োজন সমস্তটাই দেখেছি অবাক বিষ্ময়ে।

মাটি মাখানো থেকে, খড় বাঁধা থেকে প্রতিটি স্তর আমার মাথায় গেঁথে আছে। কত রকমের মাটি ব্যবহার করা হয়, কত রকমের রঙের প্রলেপ দেওয়া হয় ,কত রকমের কারুকাজ করা হয়- এ সব দেখতে দেখতেই এক সময় বড় হয়ে গেলাম। আমাদের ছোট বয়সে যে ধরনের ঠাকুর গুলো হত, সেই গুলোই থেকে আমাদের ট্রাডিশনাল ঠাকুর দেখা শুরু। আমি আমার মায়ের সঙ্গে মহালয়ার দিন সকালে ঠাকুর দেখতে যেতাম। যেহুতু সব জায়াগায় যাওয়া যাবে না ওই জন্যই কুমোরটুলির ভিতরে সব ঠাকুরই একসঙ্গে দেখে চলে আসতাম। আমরা সব স্টুডিওতেই ঘুরতাম। এই আমাদের গোরাচাঁদ পাল, জিতেন পাল বা আর বাকি যাঁরা যাঁরা ছিলেন সবার স্টুডিও। ছোট ছোট ঠাকুরও তৈরি হত কুমোরটুলি তে। সেগুলিকে ও বাদ দিতাম না। সবগুলিই এনজয় করতাম। শুধু প্রতিমা কেন, পরিবেশ। রোদ্দুরটাও ছোটবেলায় খুব সুন্দর লাগত। এখন অবশ্য খুব গরম লাগে।

তখন যে সব পুজো হত, সেই পুজোগুলো ছিল ট্রাডিশনাল। এশিয়ান পেইন্টস (আমার সালটা ঠিক মনে পড়ছে না খুব সম্ভবত বছর ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ আগেই হবে) পুজো প্রতিযোগিতা শুরু করল। তারপর যে চেঞ্জটা এলো সেগুলি খুব অন্য ধরনের পুজো। আমরা যে ধরণের পুজোর সঙ্গে ছোট বয়সে যুক্ত ছিলাম তার মধ্যেও জাঁকজমক ছিল‌ যেমন কলেজ স্কোয়ার, একটু আলাদা রকমের ছিল মহম্মদ আলী পার্ক , তারপর সংঘশ্ৰী, তার সঙ্গে ছিল আমাদের অশোক দা’র (অশোক গুপ্ত) ঠাকুর। অর্থাৎ আমাদের জগৎ মুখার্জি পার্ক।

আমার ছোট বয়সেই হাতেখড়ি আমাদের অশোক দা’র কাছে । ঠাকুর তৈরি কিভাবে করতে হয়, ওনার সঙ্গেই থাকতাম, দেখতাম এবং পরবর্তীকালে অশোক দা’র সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজও করেছি। বলতে গেলে অশোক দা’র ঠাকুরটা ছিল প্রথম থিমবেস ঠাকুর। মানে, কি বলব- একটা হাই রিলিফ পেইন্টিং ক্যানভাস মনে হত এবং তার একটা হিউজ সাইজ যেটা ছিল প্রায় ৩০ ফুট বাই ৫০ ফুট এমন একটা বোর্ডে উনি করতেন। ডিপেন্ড করতো একেকটা জায়গায় উনি একেক রকম করেছেন। জগৎ মুখার্জি পার্কে বিশাল বড় হত এবং সেখানে একটা বিশাল ক্যানভাসের মত অন্য ধরণের পুজো হত, যেখানে আমরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এমনকি যখন প্রতিমা বিসর্জন যাচ্ছে, সেই ঠাকুরটাই যখন আবার কাছে নামানো হলো, একদম আই লেবেলে, তখন ডাঃ এক রকম লাগতো। আবার পুজো শেষে যখন প্রতিমাকে সিঁদুর মাখানো হয় তখন আবার অন্য রকম দেখতে লাগতো। সেই সঙ্গে আলো ছায়াটাও পাল্টে যেত, মানে অসাধারণ একটা অনুভূতি ছিল।

Share