কে ভালো, কে মন্দ যে তার….
সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়
আমরা যে ছোটবেলাতে ভার্জিন জায়গাগুলিকে দেখিছি কোণার্ক, মহাবলি পুরাম, খাজুরাহ এভরিথিং… সবকটা মন্দিরেই কিন্তু কেয়ারলেস ব্যাপারটা ছিল। তখন ন্যাচারাল নেচারের মধ্যে ছিলো, জিনিসটাকে ট্রিম করা হয়নি, তখন অত সাজানো গোছানো হয়নি, আসলে কম্প্যাক্ট করা হয়নি। তখন তো এবানডান ল্যান্ডে পরে আছে ওই যে ফিলিংস তার মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি ছিল। পরে যখন দেখলাম রেলিং দিয়ে ঘেরা হয়েছে তখন কিন্তু ইনস্টলেশন মনে হত, এখনো মনে হয়। এখন যখন মানালিতে গেলে মনে হয় গরিয়াহাটে আছি, এত ভিড়, আর এমনই আর্কিটেকচার গুলি সবই এক রকম বাজার দোকান, লোকের খাওয়া দাওয়া। এই থিমগুলো ও মূর্তি তৈরির কাজগুলি যারা যারা করছে তাদের প্রতিটা কাজই দেখার মতোই। আস্তে আস্তে মূর্তি এবং আনুসাঙ্গিক প্যান্ডেল বা ইনস্টলেশন পার্টটা ডেভলপ করতে লাগলো। যেগুলো একটি জিনিসের একই অঙ্গ মনে হত। কারণ কোন জায়গার মূর্তি আলাদা, মন্ডপের সাথে মিল হচ্ছে না এই সব ব্যাপারগুলো থাকে তো! এরকম পরবর্তীকালেও হয়েছে। গতবছর আমি একটা দেখেছি তা উল্লেখ করছি না কিন্তু অনেক সময় এরকম হয় তাল-মিল হয় না। কিন্তু যারা এখন থিমগুলিকে নিয়ে কাজ করছে যেমন- ভবতোষ, সুশান্ত, প্রশান্ত, সনাতন, রিন্টু এমনকি তরুনও প্রত্যেকেরই নামগুলো আসবেই বলতে গেলে। প্রথম যখন সুশান্ত শুরু করেছিল বিবেকানন্দ রোডের পাশে কাপড় দিয়ে, কাজটা ভীষণ সুন্দর ছিল। এই যে ইনভেটিভ ওয়ার্কগুলোর জন্যই পুজোটা উঠে এসেছিল অন্যভাবে। তারপর ভবতোষ করেছিল বড়িশাতে কাঠের কাজ করে। এই যে থিম মেকিংগুলো এবং তারসঙ্গে যারা কাজ করে ছোট ছোট কাজগুলো এমনকি সেলাই বা বাটালি দিয়ে যারা কাঠ কাটে, প্রত্যেকটা লোকে যে কাজ পাচ্ছে, এটা বাড়তে শুরু করলো। এবং অর্থনীতি পাল্টাতে শুরু করলো। এবং বহু লোক বলে এত বাজেটের পুজো! এত টাকা খরচা করে হচ্ছে! আসলে এটা তা হচ্ছে না। এটা দুটো জিনিস হচ্ছে একটা মানুষের এডুকেশন, আরেকটা নতুন থিমের আবিষ্কার। এই আবিষ্কারের পেছনে ছিল কঠোর পরিশ্রম তা দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমনকি বিদেশ থেকেও ভিড় জমাতে আসছে। যে আইসক্রিম বিক্রি করছে তারও লাভ হচ্ছে, যে ঝাল মুড়ি বিক্রি করছে তারও লাভ হচ্ছে। আমরা যখন ছোট বেলায় দোকান, মেলা দেখতাম এগুলো তো পুজোর পার্ট ছিল, না থাকলে পুজোটা হয়তো ইনজয় করা যায় না। আবার অনেক জায়গায় হয়েছে কি তাদের পাড়ার পুজোতেই মানুষের ভিড়ে বেরোতে না পারলেও পুজোর ইনজয়টা ঠিক করে নেয়। এটা তো কারো দোষ নয়, মানুষতো চাই পুজোটা পুরোটাই মানে ১০০% ইনজয় করতে। আমি বহু লোককে দেখেছি ইচ্ছাও আছে, ক্ষমতাও আছে, মানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সব ঠাকুরই দেখে। আমাদের ছেলেকে একজন পড়াতেন উনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঠাকুর দেখে বেড়াতেন বিভিন্ন জায়গায় এবং এসে আমাকে বলতেন। এই যে পুজো দেখার আগ্রহটা বেড়েছে শুধু এই কারণে যে, প্রতিটা জায়গার পুজো আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য তৈরি করেছে বলেই।
তারপরও যেগুলো তৈরি হলো এলিমেন্টস নিয়ে মানে এখানে শব্দ ,বর্ণ ,গন্ধ ,রূপ সবকটারই পরিবর্তন হতে লাগল এবং অনেক অ্যাবসট্রাক অনুভূতিতে চলে যাচ্ছে। যেখানে হয়ত এই ভবতোষও শুরু করেছিল বছর দুয়েক আগে নাগতলায়, বিভিন্ন রকম সাউন্ড, যেই সাউন্ডগুলো আমরা খেয়াল করি না। এই শব্দগুলো ব্যবহার করে করে নিয়ে গেল আমাদের অন্য এক পরিবেশে। এই যে ইউজ অফ সাউন্ড , এইযে ইউজ অফ লাইট এবং সমস্ত কিছুর ব্যবহার
মেটারিয়াল তার সঙ্গে মূর্তি, গড়ন, পেটন সমস্তটাই কিন্তু একদম শিক্ষামূলক। এটা শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই কিন্তু নিউ জেনারেশন চায় নতুন নতুন আরো কিছু দেখবো । কারণ আমরা ছোটবেলায় কিভাবে কাটিয়েছি একটা পাড়ার ভলেন্টিয়ার হতাম এবার ওইখানেই থাকতাম আবার কাছাকাছি ঘুড়েও আসতাম। কিন্তু জাজমেন্ট এর মাধ্যমে আমি যত পূজা দেখেছি, এমনকি আমার ছেলে মেয়েকে নিয়ে যে পুজো গুলো দেখেছি সেগুলো কিন্তু পরবর্তীকালে করেছি। গত বছরে হয়ত বা তার আগের বছর আমাদের সুশান্ত তালাপ্রত্যয় সংঘে যে পুজোটা করেছে সেতা একটা অসাধারণ কাজ ছিল। এইযে প্রার্থী গুলো দেবী ভাবনা কিন্তু একই আছে, কিন্তু আমার মনে হয় মহিমাটা আরো বাড়িয়েছে। আমরা শুধু মূর্তি দেখছি তাতে ফুল-মালা বসানো টিপিক্যাল ট্রাডিশনাল যে পুজো তার একটা মাধুর্য বা মহিমা সবই আছে ,সেটা দেখে আমরা তৃপ্ত হই। যা দেখে একই অনুভূতি হয় প্রতিবছর। মানে একই জিনিস দেখেছি। সেই চেঞ্জটাকে আমাদের যে পৃথিবীব্যাপী ব্যাপ্তি হয়েছে সেটা আমাদের দুর্গাপুজোর বিরাট বড় প্রাপ্তি। আমাদের দেশের একটা বড় পার্ট , যেটা সমস্ত মানুষকে ভাবিয়ে তুলিয়েছে যে, এরম একটা শিল্প ইনস্টলেশন আর্ট যেটা পৃথিবীর অন্যান্য আর্ট গ্যালারিতে গিয়ে মানুষ দেখে সেটা লোকে বারোয়ারি পুজোতে গিয়ে দেখছে। প্রতিবছরই নতুন নতুন ইনভেনশন দেখছে। এই ইনভেনশনগুলো আস্তে আস্তে এমন একটা জায়গায় পৌঁছে গেছে যেটা কিন্তু ভাবনার বাইরে। আমরা প্রত্যেকেই প্রতিবছর অভিভূত হচ্ছি এবং জাজমেন্টাল ভীষণভাবে কঠিন হয়ে উঠছে । এবং যারা যারা পায় ঠিকঠাক জাজমেন্টই পায়।