মন্ডপে মন্ডপে আবার কবে যাব?
সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়
এখন যে ভাবে কাজ হচ্ছে, তাতে আর্ট কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা কাজ পাচ্ছে। একটা সময় এই আর্টের পিছনেই মিচুয়াল ফান্ডের মত মানুষ টাকা ইনভেস্ট করতো। যারা ছবি আঁকে তাদের যে এডুকেশনটা সবাইতো পড়তে পারে না , সেই জন্য লোকশিল্পটা ব্যবহার করা হয়। সব কাজের মধ্যে কিন্তু লোকশিল্প চলে আসছে, তাই তাদেরকে ব্যবহার করা হয়। তারা কাজ পাচ্ছে, এর সঙ্গে যারা এস্টাবলিশ আর্টিস্ট তারাও কাজ পাচ্ছে। কারণ একজন যে লিড করছে তার সঙ্গে যারা অ্যাসিস্ট্যান্ট তারাও আর্ট কলেজের ছেলে। যত বড় আকারের পুজো হবে তারাও ততো কাজ পাবে। এটা একটা বড় প্রাপ্তি। এটা দরকারও আছে। এইযে বছর দুয়েক ঘরে বসে আছে তারা তো কিছুই করতে পারেনি , এবারও কতটা করতে পারবে তা আমরা জানি না। শুনছি সবটাই নাকি লো-বাজেটের হবে কিন্তু আশা রাখছি এবছর লো-বাজেট হলেও যারা ভালো ভালো কাজ জানে তারা আমাদের এমন কিছু দেখিয়ে ছাড়বে যেটা আমরা আগে দেখিনি, সেই আশাটা রয়েছে। এবং এই ভাবনা ঘেরা যে কাজগুলো, যেগুলোর মধ্যে আমরা এক অন্যরকম আনন্দ পাই। সবাই এই কোম্পারিজনটা করে এতে একটা পুজো ব্যাপারটা ফিল করে। কিন্তু আসলে পরিবেশের মধ্যে সবকিছুই থাকে , যেটা আমরা বলি পুজোর ঢাকের আওয়াজ। কিন্তু এখন তো সেগুলো এইভাবে হয় না। আগে যেমন আমাদের যৌবন বয়সে কিশোর কুমারের গান বাজতো , ভালো ভালো সিনেমার গান বাজতো। সেটা একটা যুগ চলে গেছে। সেটার মধ্যে একটা আলাদা ভালো লাগা লুকিয়ে থাকত। এখন সেই গান গুলো শুনলে ওই পুজোটার ফিলিংস হয়। কিন্তু নতুন নতুন ভাবনায় পূজগুলো হলেও মজাটা ঠিক আগের মত নেই। বর্তমানে জাজমেন্ট করাটা খুব কঠিন এই মনে করো কোনো এক পুজোতে ঢুকেছি জাজমেন্ট করতে বহু মানুষ অপেক্ষা করে বসে আছে , তাদের আটকে রাখা হয়েছে সেটা একটা অদ্ভুত চাপ লাগে আমার। মানুষ এখন উন্মাদ হয়ে গেছে এইসব ঠাকুর গুলো দেখার জন্য । কোভিড পরিস্থিতিতে মানুষ নিয়মকানুন না মেনেই ঠাকুর দেখছে, যা হয় হবে, এটাতেও অনেকটা ক্ষতি হয়েছে, আমরা এতটাই ইমোশনাল । এবার একটু সুধিধা আছে ভ্যাক্সিনেটেড হয়েছি , অনেক লোক হয়েও যাবে তো মনে হয় পুজোটা এবার সেইভাবে দেখতে পাবো কারণ, গতবার অনলাইন জাজমেন্ট করেছি। অনলাইন আর জায়গায় গিয়ে তার এসেন্সটা নেওয়া দুটোর মধ্যে তফাৎ আছে। কারণ অরিজিনাল আর ছবি দেখা এই দুটোর মধ্যেও তফাৎ আছে। সেখানে যদিও আগেও যেটা এশিয়ান পেইন্টস-এ হত যে আমরা হোটেলে এসে স্ক্রিনে আবার দেখতাম। কারণ প্রথম কি দেখেছি সেটা তো মাথায় নেই। সেগুলো অল্পসময়ে মধ্যে আমরা নোট করতাম, কিন্তু ওই ভিজুয়ালটা আবার যখন মাথায় আসতো তখন আমরা ঠিক মতো জাজমেন্টটা করতে পারতাম।
আর মেইন জিনিস হচ্ছে বহু মানুষ কাজ পাচ্ছে। এটাই সবথেকে আমাদের বড় উৎসব । গত পরশু আমি গণেশ পুজো উদ্বোধন করতে গিয়েছিলাম, সেখানেও তো কিছু করে খাচ্ছে। যেটা অনেক মানুষের বিরাট উপকার হচ্ছে। আর আরো ভালো ভালো ভাবনা আমরা পাবো, ম্যাটেরিয়াল ইউজ সাবজেক্টটা কি করেছে এবং অনেক শিক্ষামূলক বিষয় আছে যেমন প্রাকৃতিক বিপর্যয় হচ্ছে সেগুলোর কারণ কিছু এডুকেশনের প্রবলেম আছে সেটা, এই যে সুন্দরবনে বারবার আঘাত গুলো আসছে এমনি আমাদের শহরের আসছে এটা আমাদের ইকোলজিকাল ডিসব্যালেন্স এর জন্যই তো সেইটাকেও আমাদের এই থিমের মধ্যে ব্যবহার করা হয়। যাতে মানুষজন সচেতন হয়। ধরো প্লাস্টিকের ব্যবহার , মানে এবারে শহরে বেশিরভাগ সমস্যাটাই হয়েছে এই প্লাস্টিক। এই সমস্যাগুলো কিন্তু একেকটা থিম এবং আমদের জীবনের যে ধারাবাহিকতা, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে, যেমন ধরো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিটা কবিতাতে আমরা যা যা পড়ি রবি ঠাকুর কিন্তু আমাদের সঙ্গেই থাকেন। আমাদের যখন একা লাগে তখনও রবীন্দ্রনাথ থাকেন ,যখন আনন্দে থাকি তখনও থাকেন, যখন আবার নাচি তখনও থাকেন। এই রকম থিমগুলো এইভাবেই আসে। আমাদের প্রতিদিনের যে সময় অতিক্রম করছি সেখান থেকে তো কিছু শিক্ষা হচ্ছে, সময় চলে যাচ্ছে আমরা সময়টাকে ধরার চেষ্টা করছি সেই রকমই থিমগুলো তাই হচ্ছে। প্রতিটা সময়ের সাথে থিম গুলো ডেভলপ করেছে। এই ডেভলপমেন্টটা একটা বিশাল আকার ধারণ করেছে, যেটা সত্যি মানুষকে ভাবাচ্ছে। যদি প্যান্ডামিক সিচুয়েশনটা চলে যায় তাহলে আমরা আরো ভালো ভালো কিছু পাবো, আশা করছি তাই হবে। সবকিছুরই একটা নিরাময় হয়! এটারো হবে। এটা হোক। সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন আর পুজোটাকে ভালো ইনজয় করুন। তবে কোভিডের নিয়মকানুন গুলো মানতেই হবে। এটা না মানলে নিজেদেরই ক্ষতি। (শেষ)