শিল্পীর রোজনামচা/ ১০

গুটিকতক ভদ্রলোকের পুজো

দীপক ঘোষ

আমার ফেসবুক ঘাটলেই দেখতে পাবেন আমার এক স্বীকারোক্তি ‘আমার সাফল্যের পেছনে রায় ও মার্টিন এর মতন যাদের অবদান অনস্বীকার্য তারা হলেন দেবদূত ঘোষঠাকুর ও সম্রাট চট্টোপাধ্যায়।’ ২০০৬ সালের মে মাসে আবার এল দেবদূতদার ফোন, ‘রামলাল বাজার সার্বজনীন এর পুজোটা করে দিতে হবে।’ যার জন্য পাড়ার দীপক ঘোষ সার্বজনীন হয়ে গিয়েছিল তাঁকে না বলাটা ঘোরতর অন্যায়। কিন্তু একটা সমস্যাও ছিল– সে বছর ফের আমি সুরুচি তে কাজ করছি। অরূপের একটাই অনুরোধ, ‘দীপক দা তুমি অন্য আর কোন পুজো কোরো না।’ ওকে কথা দিয়েছিলাম। একদিকে দেবদূত দার অনুরোধ, অন্যদিকে অরূপ কে দেওয়া কথা। আমি পড়লাম দ্বিধায়। যাই হোক সমস্যার সমাধান টা দেবদূত দা’ই করে দেয়। অনুপম-কবীর আর একজন (নামটা মনে নেই) আমার কাছে আসার পর আমি একদিন রাতে রামলাল বাজারে যাই। জায়গাটা দেখে নাথ দা, অনুপম আর কবীরের সঙ্গে কথা বলে জানিয়ে দিই পরে এসে কি কাজ করবো ও কত খরচ পরবে তা নিয়ে আলোচনা করে নেব। সবার কথা ও ব্যবহারের মধ্যে শিক্ষার ছাপ স্পষ্ট ছিল। তবে কবীর খুবই সরল ছেলে। ভদ্রলোকের সঙ্গচ্যুত হতে চাই না, তাই দু-তিন দিনের মধ্যেই সব চূড়ান্ত করে আমার agreement paperএ সই করতে দিলাম। আগের বছরের কুৎসিত অভিজ্ঞতা জন্য এই লিখিত চুক্তির পন্থা নিতে বাধ্য হই। আমার লেখা agreement পড়ে একটি রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কের বড় কর্তা নাথদা (রবীন্দ্র কিশোর নাথ) বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনি কি ল-ইয়ার? কোনো শিল্পীর কাছেই এরকম এগ্রিমেন্ট পেপার দেখিনি!’ আমি প্রত্যুত্তরে জানালাম, ‘আমি commerce এর টিচার।’ যাই হোক ঠিক হলো প্রদীপ রুদ্র পাল রাজস্থানী ঘরানায় ঠাকুরটা বানাবে। দেবদূত দার আর আমার সম্মান (সঙ্গে অনুপমদের বিশ্বাস)রক্ষা করতে হবে  তাই কাজটাকে 100% অনুভব দিয়ে করার চেষ্টা করলাম ‘সালেম সিংয়ের
হাবেলি’। কাজটা যথেষ্ট সুন্দর হয়েছিল ওই বাজারের মধ্যে। কিন্তু একটা দুঃখ থেকে গিয়েছিল প্রদীপ ছোট পুজোর ঠাকুরটাকে অতটা গুরুত্ব দেয়নি। তাই ঠাকুরটা একদমই বেমানান হয়েছিল। মধ্যমগ্রাম থেকে এক নিপাট ভদ্রলোক আমার অনুরোধে এসে আলো করে দিয়েছিলেন অসাধারণ তার কাজের অভিজ্ঞতা। বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে খুব প্রশংসিত হওয়ায় ‘রামলাল বাজার সার্বজনীন’ পুজোটা একটা বড় পর্যায়ে চলে যায়। চুক্তিমতো যেদিন শেষ ইন্সটলমেন্টে আমাকে দেওয়ার কথা সেদিন টাকাটা দিয়ে নাথ দা আমায় বলেছিলেন, ‘আপনার মত শিল্পীর ই সাজে এরকম একটা এগ্রিমেন্ট পেপার তৈরি করা যেখানে আপনি উভয় পক্ষকেই বেঁধে রেখেছিলেন, যাতে কেউ কারো ক্ষতি করতে না পারে। দীপক বাবু আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’

Share